চারদেয়ালের মাঝে পিস লিলি (Spathyphyllum sp.)

বেশ কয়েকবছর আগে অফিসের পক্ষ থেকে একটি সেমিনারে যোগ দিয়েছিলাম। সেমিনারের আয়োজক বিদেশী একটি সংস্থা, আর স্থানটি ছিল ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেল। অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য সাজানো মঞ্চটি দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। রঙ-বেরঙের ফুলের তোড়া দিয়ে মঞ্চের উপরের প্রধান অতিথিদের জন্য নির্ধারিত টেবিলটি সাজানো আর টেবিলের ধার ঘেষে নিচে সারিদিয়ে সাজানো ছিল ফুলসহ বেশ কয়েকটি সতেজ পিস লিলি গাছ। আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক সেমিনারের ভাবগাম্ভীর্য এনে দিয়েছিল ঐ পিস লিলি গুলি। আমি একেবারে অভিভূত হয়েছিলাম। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বহুতল ভবনের সামনের ছায়াময় জায়গায় এই গাছ দেখেছি। অপরিচিত অথবা পরিচিত কয়েকজনের অফিসে বা বাসাতেও এই গাছটি দেখেছি। সবখানেই গাছটিকে সম্পূর্ণ মানানসই মনে হয়েছে। গাছটি যেন তার আশেপাশে একটা স্বর্গীয় শান্তির পরিবেশ তৈরী করে রাখে। মনটাই ভাল হয়ে যায়।
ঘরের মধ্যে যে কয়েকটি গাছ লালন করা যায়, সেগুলির মধ্যে পিস লিলি অন্যতম জনপ্রিয়। পিস লিলির যত্নের জন্য খুবই কম পরিশ্রম দরকার। পিস লিলি শুধু সৌন্দর্য বর্ধন করে না এটি বায়ুও বিশুদ্ধ করে থাকে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা  NASA তাদের একটি গবেষণা পত্রে পিস লিলিকে সেরা ১০টি বাতাস বিশুদ্ধকারী গাছের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে পিস লিলি ঘরের বাতাসে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ যেমন কার্পেট থেকে উৎপন্ন ফর্মালডিহাইড শতকরা ৬০ ভাগ কমায়; প্লাস্টিকের পণ্য থেকে উৎপন্ন ট্রাইক্লোরোইথিলিন শতকরা ২৩ ভাগ কমায়; ঘরের রং থেকে উৎপন্ন বেনজিন শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কমায় এবং বাতাস থেকে জাইলিনের মত পদার্থ দূর করে থাকে।
Peace Lily (Spathyphyllum) লিলি নাম ধারণ করলেও এটি আসলে লিলি (Lillium sp.) পরিবারের নয়, বরং এটি কচু বা Araceae পরিবারভূক্ত। গাছটির আদি নিবাস আমেরিকার ক্রান্তিয় অতিবৃষ্টি অরণ্য(Tropical rainforest)দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ক্রান্তীয় অঞ্চলের আমাজন নদীর অববাহিকার আমাজন অরণ্য থেকে শুরু করে নিকারাগুয়া ও বেলিজসহ মধ্য আমেরিকায় এই আমাজন অতিবৃষ্টি অরণ্য বিরাজিত)। এই অরণ্যের বৃষ্টিবহুল আর্দ্র-উষ্ণ পরিবেশ, উঁচু আর ঘন গাছের ছায়া, অল্প-স্বল্প রোদের উঁকি-ঝুঁকি – এই রকম পরিবেশই হল পিস লিলির বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ। আমাদের দেশে শীতকাল ছাড়া সারা বছরই উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। অফিসে, বাড়ির বেডরুমে বা হাসপাতালের আলোক উজ্জ্বল রুম গুলিতে যে গাছ গুলি লাগানো যায়পিস লিলি তাদের মধ্যে একটি।
পিস লিলি জাত অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু হতে পারে। গাছটির পাতা আকর্ষণীয় গাড় সবুজ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ এর সাদা ফণার মত “ফুল”। পিস লিলির সাদা অংশটি আসলে ফুল নয়। সাদা পাপড়িটি যে হালকা হলুদ বা সবুজাভ লম্বা দন্ডটিকে ঘিরে থাকে, সেটিই হ’ল ফুল বা সঠিকভাবে পুষ্পমঞ্জরী।

গাছ রোপন ও পরিচর্যা

ঘরের উপযুক্ত স্থান নির্বাচন : উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ এই গাছের জন্য আদর্শ। জানালা থেকে ৬ থেকে ৮ ফুট দুরে রাখা যাবে না। সরাসরি সূর্যের আলো, ঠাণ্ডা বাতাস, কিংবা সরাসরি বাতাস এই গাছের জন্য ক্ষতিকর। উত্তর বা পূর্ব মুখি জানালার নিকটে উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ খুবই ভালো। ঘরের আলো এমন হবে যেন, একটা বই ভালভাবে পড়া যায়। ঘরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এবং আর্দ্রতা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ হতে হবে। পূর্ব দিকের জানালা দিয়ে আসা সকালের রোদ কিছু সময়ের জন্য ভাল তবে বিকালে পশ্চিমের রোদ এই গাছের জন্য ভাল নয়।
গাছের যত্ন ও পানি প্রদান : হালকা স্যাতস্যাতে ভিজা মাটি এই গাছের জন্য ভালো। মাটি শুকিয়ে আসলে পানি দিতে হয়। কিন্তু এমনভাবে মাটি ভিজাতে হবে যেন মাটিতে পানি জমে না যায়। এক মুঠো মাটি নিয়ে জোরে মুঠো করার পর যদি হাতের তালু ভিজাভিজা লাগে তবে বুঝতে হবে মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি আছে। বেশি পানিতে গাছটির শিকড় পচে যায় আবার পানি কম হলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। প্রয়াজন ও আবহাওয়া অনুযায়ি সপ্তাহে একবার পানি দিতে হয়, আবার গ্রীষ্মকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেলে সপ্তাহে দু’বার পানি দিতে হতে পারে।
আর্দ্রতা বজায় রাখা : গাছটির জন্য আদর্শ হল ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উষ্ণতা এবং ৫০ ভাগের উপরে আর্দ্রতা। আমাদের দেশে শীতকাল ছাড়া সারা বছরই এই তাপমাত্রা থাকে। তবে আর্দ্রতার তারতম্য হয়। আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য গাছের পটটি (ছবির মতো) পাথর বিছানো পানি ভর্তি ট্রের উপর রাখা যেতে পারে। অথবা সপ্তাহে কয়েকবার পানি স্প্রে করা যেতে পারে। বিশেষতঃ গ্রীষ্মকাল ও বসন্তকালে ফুল আসার আগে ও ফুল ধারণের সময় ঘনঘন পানি স্প্রে করতে হয়। ক্লোরিন মিশ্রিত পানি গাছটির জন্য ক্ষতিকর। শহরের ট্যাপের পানিতে ক্লোরিন থাকে। সুতরাং গাছে ট্যাপের পানি দেয়ার আগে পানিকে একটি খোলা পাত্রে ২৪ ঘণ্টা সময় রেখে দিলে, পানি ক্লোরিন মুক্ত হয়।
সার প্রয়োগ : গাছটির জন্য খুব বেশী সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। গাছের স্বাস্থ্য অনুযায়ী মাঝে মধ্যে সার দিলেই চলে। শীতের শেষে ৬ সপ্তাহে একবার ফসফেট জাতীয় সার দিলে গ্রীষ্ম ও বসন্তে প্রচুর ফুল আসে। ফুলের রং সবুজাভ হলে সারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। দুর্বল ফুল বা ফুল না আসলে ফসফেট সার পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে হয়। সার প্রয়োগের সাথে সাথে গাছটি আলোকিত স্থানে আছে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। তবে সরাসরি রোদে রাখা যাবে না। আলো কম হলেও ফুল কম হবে বা ফুল ধরবে না।
ছাটাই : অন্য গাছের মত এই গাছের পাতা সহজে শুকায় না। তবে বয়স্ক পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেলে ধারালো কাঁচি দিয়ে টবের মাটির ধার ঘেঁষে পাতা কেটে ফেলা উচিত। তবে প্রায়শঃই পাতা হলুদ হয়ে কুঁকড়ে গেলে আলো ও আর্দ্রতা এবং পানি সরবরাহের ভারসাম্য ঠিক করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে গাছে কোন রোগ হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।

বংশ বৃদ্ধি ও টব পরিবর্তন

উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই গাছ দ্রুত বড় হয়। তখন পটের তুলনায় গাছটি বড় দেখায়, বারবার পানি দিতে হয়, এবং টবের মাটির উপরের দিকে শিকড়ের জটলা দেখা যায়। প্রায় ১-২ বছরের মধ্যে এই অবস্থা হতে পারে। এসময় গাছটিকে পূর্বের চেয়ে বড় আকারের টবে স্থানান্তর করতে হয়। অথবা রাইজোম কেটে নতুন ছোট গাছ তৈরী করে বংশ বৃদ্ধি করতে হয়।
পাত্র নির্বাচন : ঘরে লাগানো পিস লিলির জন্য পাত্রটির মুখের সর্বোচ্চ ১০ ইঞ্চিই যথেষ্ট। ছোট গাছ ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির পটে লাগানো যায়। সিরামিক, প্লাষ্টিক, মাটি যেকোন টবই ভাল। তবে টবের নিচে পানি সরার জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। প্রচুর জৈবসার যুক্ত দোঁ-আশ মাটি গাছের জন্য উপযুক্ত। মাটি হালকা, নরম ও ঝরঝরে হতে হবে। এই রকম মাটি থেকে সহজে পানি সরে যেতে পারে। দোঁ-আশ মাটির সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ জৈবসার / গোবর সার মিশালে এই মাটি তৈরী হয়।
বাড়ন্ত গাছের জন্য টব পরিবর্তন : পুরাতন টবের চেয়ে বড় আকারের নতুন টব নির্বাচন করে, তাতে গাছ লাগানোর অর্ধেক পরিমাণ মাটি নিতে হবে। পুরাতন টবের মাটি শুকনো থাকলে, টব পরিবর্তনের ১ ঘণ্টা আগে মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে, যাতে মাটি শিকড়ের সাথে জড়িয়ে থাকতে পারে। এবার গাছ সহ টবটি ধীরে ধীরে উল্টো করে শুন্যে ধরে একটু ঝাঁকি দিলে মাটি সহ গাছটি টব থেকে আলগা হবে। এসময় ডান হাত দিয়ে উল্টে ধরা গাছের গোড়ার মাটি সহ গাছের গোড়াটি ধরে রাখতে হয়; আর বাম হাত দিয়ে টবটি সরিয়ে নিতে হয়। সাবধানে কাজটি করতে হয়, যেন হাত থেকে গাছটি পড়ে গিয়ে, গাছের ক্ষতি না হয়। এবার হাত দিয়ে বা ধারালো কিছু দিয়ে অর্ধেক পরিমাণ পুরাতন মাটি ফেলে দিয়ে মাটি সহ নতুন পাত্রে গাছটি বসিয়ে দিতে হয়। এরপর টবের মুখ থেকে ১-২ ইঞ্চি বাদ রেখে গাছের গোড়া অবধি বাকি অংশ মাটি চাপা দিতে হয়।
বংশ বৃদ্ধি করার জন্য পট পরিবর্তন : পূর্ণ বয়স্ক গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১-২ ইঞ্চি নিচেই শক্ত একটি অংশ থাকে। এই অংশ থেকে নিচের দিকে শিকড় ও উপরের দিকে পাতা বের হয়। এই অংশকে রাইজোম বলে। টবের মাটি উপরে থেকে সরিয়ে রাইজোমের অর্ধেক পরিমাণ অংশ পর্যন্ত মাটি সাবধানে সরিয়ে ফেলতে হয়। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে পাতা ও শিকড়সহ রাইজোমটি আকার অনুযায়ী লম্বালম্বি কয়েক টুকরো করে প্রতিটি টুকরো আলাদা করে ছোট টবে লাগানোর মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করা যায়। রাইজোম কাটার সময় পচা বা শিকড় বিহীন শক্ত রাইজোম বাদ দিতে হয়। নতুন টবে গাছটি যাতে সোজা থাকে সে জন্য গাছের পাশে কাঠি পুতে, সেই কাঠির সাথে সোজা করে গাছটি বেঁধে দিতে হয়।
অনেক সময় পূর্ণ বয়স্ক রাইজোমের পাশে যুক্ত অবস্থায় বর্ধিত একটি অংশ দেখা যায়, যার সাথে পাতা ও শিকড় যুক্ত থাকে। রাইজোমের সাথে সংযুক্ত বর্ধিত এই অংশকে ক্রাউন বলে। এই ক্রাউনকে রাইজোম থেকে আলাদা করে, নতুন টবে লাগিয়েও গাছের বংশ বৃদ্ধি করা যায়।

রোগ বালাই

পিস লিলি সহজে রোগ-বালাই আক্রান্ত হয় না। রোগ ও বালাই মুক্ত রাখতে যা করতে হয় –
  • সঠিক ও পরিমাণমত পানি দেয়া। স্প্রে করে আর্দ্রতা বজায় রাখা। পানি কম হলে পাতা নেতিয়ে পড়ে আবার বেশি পানি দিলে শিকড়ে পচন ধরে।
  • গাছের পাতা হঠাৎ বাদামী বা কাল হয়ে যেতে শুরু করলে (ছবির মত) বুঝতে হবে বেশি ঠাণ্ডা, বেশি গরম বা সরাসরি রোদ লাগার কারণে তা হচ্ছে।
  • যদি ধীরে ধীরে পাতা বাদামী হতে থাকে, তবে বুঝতে হবে গাছে অতিরিক্ত পানি দেয়া হচ্ছে অথবা কম পানি দেয়া হচ্ছে। আবার মাটি বা পানিতে কোন ক্ষতিকর কেমিক্যাল জমার কারণেও এমন হতে পারে। মাটিতে কেমিক্যাল দুষণ হলে, মাটির উপর হলুদ বা সাদা আবরণ দেখা যায়। এসময় গাছে কেমিক্যাল মুক্ত বিশুদ্ধ পানি দিতে হয়, এবং কেমিক্যাল সার না দিয়ে জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়।
  • শিকড় পচা রোগ শুরু হলে সুস্থ্য গাছ হঠাৎ নেতিয়ে পড়বে ও পাতা কুঁকড়ে যাবে। এসময় শীঘ্র নতুন পটে শুকনা মাটিতে গাছ সরিয়ে নিতে হয়। অথবা গোড়ার রাইজোমের সুস্থ্য অংশ কেটে নতুন পটে লাগাতে হয়।
  • গাছে মাঝে মাঝে এপিড, মাইট আক্রমণ করে। গাছের পাতায় পিচ্ছিল ক্ষরণ, পাতায় মাকড়সার জালের মতো গুটি দেখা যায়, বা পাতা কুঁকড়ে গেলে মাইট আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরে নিতে হয়। আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা ও উপযুক্ত কীটনাশক দিতে হয়।
  • গাছের গোড়া বা পাতার গোড়ায় লম্বা শিরার মত কালো দাগ ছত্রাক আক্রমণের লক্ষণ। আক্রান্ত পাতা সাথে সাথে কেটে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশী হলে সম্পূর্ণ গাছ ফেলে দিতে হয়। আর কম হলে সুস্থ রাইজোম কেটে নতুন পটে লাগাতে হয়। ছত্রাকনাশক দিয়েও গাছ রোগমুক্ত করা যায়।

সতর্কতা

Araceae পরিবারভূক্ত অন্য গাছের মতো পিস লিলি পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে যা, শিশুদের হাতে চুলকানি সৃষ্টি করে। অসাবধানতায় পাতা খেয়ে ফেললে গলায় জ্বালা সৃষ্টি করে। একইভাবে বাড়ীর পোষা বিড়াল বা কুকুরের জন্যও এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্ষতিকর।

সারসংক্ষেপ

পরিচয় : চলতি নাম : পিস লিলি। বৈজ্ঞানিক নাম : Spathiphyllum sp. পরিবার : Araceae উপৎপত্তি : দক্ষিণ আমেরিকা।
আকার : দেড় ফুট থেকে চার ফুট পর্যন্ত উচ্চতা। কাণ্ডহীন রাইজোম যুক্ত। গোড়ার রাইজোম থেকে গাড় সবুজ পাতা উপরের দিকে বের হয়। মুল আকর্ষণ গাড় সবুজ পাতা ও সাদা ফণার ন্যায় ফুল। 
পরিচর্যায় পরিশ্রম : অতি সহজ, কম পরিশ্রম
আলো : সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না, উজ্জ্বল স্বাভাবিক আলোযুক্ত স্থান। ঘরের উত্তর বা পূর্ব দিকের জানালা থেকে ৬ ফুট বা ৮ ফুট দুরে আলোকিত স্থান। আলো বেশি হলে পাতা হলুদ হয়ে আসে। সরাসরি রোদ লাগলে পাতা কালো হয়ে যায়। 
পানি : স্যাতস্যাতে মাটি উপযোগি। দাঁড়ানো পানিতে গাছের শিকড় পচে যায়। মাটি শুকিয়ে আসলে পাতা নেতিয়ে পড়ে। গাছের পাতা সামান্য নেতিয়ে পড়লেই বুঝতে হবে, গাছের পানি প্রয়োজন। সাধারণভাবে সপ্তাহে একবার মাটি স্যাতস্যাতে করে ভিজিয়ে দিতে হয়। গ্রীষ্মকালে পানি ছিটিয়ে বা স্প্রে করে দিতে হয়। শীতকালে কম পানি প্রয়োজন হয়। পানি যে ক্লোরিনা বা অন্য কেমিক্যাল মুক্ত থাকে।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা : ঘরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এবং আর্দ্রতা ৫০ ভাগের বেশি থাকতে হয়। শীতকালে ঘরের জানালা বন্ধ রেখে এবং গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত পানি স্প্রে করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
সার প্রয়োগ : লাগানোর পর তেমন সারের প্রয়োজন হয় না। ফুল আসার আগে জৈব সার ও ফসফেট জাতীয় সার দিতে হয়। তবে ফুল সবুজাভ হলে সারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়।
রোগবালাই : সাধারণত তেমন কোন রোগ হয় না। তবে কিছু ছত্রাক রোগ হতে পারে। আবার মাইট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা উচিৎ। সেই সাথে উপযুক্ত কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক দিতে হয়।
বিষাক্ততা : পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকার কারণে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হয়। সেই সাথে পোষা কুকুর বা বিড়াল থেকেও গাছটি দুরে রাখতে হবে।
উপকারিতা : আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা  NASA কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত ঘরের পরিবেশ বান্ধব গাছ। ঘরের বাতাসকে ফর্মালিন, জাইলিন, বেনজিন ও ট্রাইক্লোরোইথিলিন মুক্ত করে। কম পরিশ্রমে ঘরের মধ্যে, সূর্য্যের সরাসরি আলো ছাড়া পালন করা যায়। দীর্ঘস্থায়ী আকর্ষণীয় সাদা ফুলের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয়।


here

Comments

Popular posts from this blog

চারদেয়ালের মাঝে সুদর্শনা (Anthurium andraeanum)

চারদেয়ালের মাঝে বোস্টন ফার্ন (Nephrolepis exaltata)