চারদেয়ালের মাঝে বোস্টন ফার্ন (Nephrolepis exaltata)
বোস্টন ফার্ন (Nephrolepis exaltata)
‘চারদেয়ালের মাঝে গাছ’ – এই
সিরিজে আজ আর একটি গাছ নিয়ে কথা বলব। ছোট্ট মনোরম ফার্ন (polypodiopsida) শ্রেণীর উদ্ভিদটির নাম বোস্টন ফার্ন যা লালনের জন্য খুবই কম
পরিশ্রম ও যত্নের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে ঘর সাজানোর জন্য এই গাছটি পছন্দের
তালিকায় প্রথম। বোস্টন ফার্নের পালনবিধি খুবই সহজ, কিন্তু সামান্য এই নিয়মগুলি
খুবই নির্দিষ্টভাবে পালন করতে হয়। এই ফার্নের যত্ন নেয়ার সামান্য কৌশল বা পরামর্শ
তুলে দিলাম, যা মেনে চললে আপনার আদরের গাছটি সুস্থ্য, সবল ও ভালো থেকে ঘরের শোভা
বৃদ্ধি করবে।
কিভাবে পটে বা টবে বোস্টন ফার্ন লাগাবেন :
মাটি তৈরি : বোস্টন ফার্ন
কিছুটা স্যাতস্যাতে মাটি পছন্দ করে। দো-আঁশ মাটির সাথে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার /
পাতা পচা সার / কচুরি পানা পঁচা সার মিশিয়ে ফার্নের উপযুক্ত মাটি তৈরি হয়। জৈব
সারের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি থাকে।
পট বা টব নির্বাচন : পাত্রে
জায়গা যত বেশী পাবে এই ফার্ন মাটিতে তত বেশী শিকড় ছড়াবে এবং আকারে তত বড় হবে। সুস্থ
সবল একটি ফার্ন ৩ ফুট লম্বা ও ৩ ফুট চওড়া হতে পারে। ঘরের সাথে মানানসই ফার্নের আকারের
কথা চিন্তা করে পটের আকার নির্ধারণ করা উচিত। নার্সারী গুলিতে পাওয়া যায় এমন ছোট
বা মাঝারি মাটির টব অথবা টেরাকোটা ডিজাইন করা ঝুলন্ত টব এসবের মধ্যেই এই ফার্ন লাগানো
যায়। তবে যে পাত্রেই লাগানো হোক না কেন পাত্রটি হতে হবে কিছুটা গভীর যাতে সহজে
শিকড় ছড়াতে পারে এবং পাত্রের তলায় অতিরিক্ত পানি সরে যাবার জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ফার্ন
স্যাতস্যাতে মাটি পছন্দ করলেও জমে থাকা পানি একদম পছন্দ করে না।
পটে গাছ লাগানো : নির্বাচিত
পাত্রে এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ মাটি পূর্ণ করে তার উপরে গাছটি বসিয়ে দিয়ে উপর থেকে এক
ইঞ্চি পরিমাণ খালি রেখে বাকি অংশ মাটি পূর্ণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, গাছের
সম্পূর্ণ শিকড় ও পাতার গোড়ার কিছুটা অংশ মাটির নিচে থাকে।
গাছের পরিচর্যা:
আলো : স্বাভাবিক উজ্জ্বল আলোকিত ও আর্দ্র পরিবেশ এই ফার্ণের জন্য উপযুক্ত। ঘরের বাতাসে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এই গাছের জন্য উপযুক্ত। বসার ঘরের এক প্রান্তে জানালার ধারে, আলোকিত অফিসের এক কোণে উঁচু স্যাণ্ডের উপর, ঘেরা ব্যালকোনিতে ঝুলন্ত এই ফার্ন রাখা যেতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলো এর জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিক যে আলোতে একটি বই ভালোভাবে পড়া যায় সেই আলোই বোস্টন ফার্নের জন্য যথেষ্ট। সকালের সূর্যের আলো দুই ঘণ্টা পর্যন্ত পেলে তা গাছের জন্য আরোও উপকারী।
আর্দ্রতা : বোস্টন ফার্নের জন্য
বাতাসে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আর্দ্রতা প্রয়োজন। পরিবেশে আর্দ্রতা কমে আসলে এর পাতা হলুদ
হয়ে আসে। সকল সময়ে পটের মাটি যেন স্যাতস্যাতে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। টবের
মাটি স্যাতস্যাতে রাখতে হবে, তবে ভিজা না থাকে। শুষ্ক আবহাওয়ায় গাছের উপর পানি
স্প্রে করা যেতে পারে। মাটি শুকিয়ে আসলে প্রয়োজনমত পানি দিতে হবে। আবহাওয়ায় আর্দ্রতা
পরপর কয়েকদিন কম থাকলে টবের পাশে ট্রে-এর উপর পাথর বা ইটের টুকরো ছড়িয়ে দিয়ে তাতে
পানি দিয়ে রাখতে হবে (ছবির মতো করে), যাতে ট্রের পানি আস্তে আস্তে বাষ্প হয়ে গাছের
চারপাশে আর্দ্র পরিবেশ বজায় রাখে। তবে শীতে এই গাছে পানির চাহিদা কম হওয়ায় বারবার
পানি দেয়ার দরকার হয় না। তবে এ সময়ে মাটি যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
পরিপক্ক পাতা হলুদ হয়ে
গেলে, ধারালো কাঁচি দিয়ে পাতা গোড়া থেকে কেটে দিতে হয়। অনেক সময় পূর্ণ বয়স্ক পাতার
নিচে কালো-কালো গোটা দেখা যায়। এগুলি এই গাছের বীজ যা কয়েকদিনের মধ্যে আপনা থেকেই
ঝরে যায়।
যত্ন : গাছের সারের চাহিদা খুবই
কম। তবে বছরে ২/১ বার মাটি নাড়াচাড়া করে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া ও ফসফেট মিশ্রণ
দিলেই চলে। পূর্ণ বয়স্ক গাছে বেশিরভাগ পাতা কোঁকড়ানো বা সরু-লম্বাটে, দূর্বল
দেখালে; সকল পাতা গোড়া থেকে ২/৩ ইঞ্চি রেখে কেটে ফেলা দরকার। এরপর নিয়মিত পরিচর্যা
ও পানি দিলে ধীরে ধীরে নতুন পাতা গজায় ও গাছটি সতেজ হয়।
রোগ-বালাই : বোস্টন ফার্ন যত্নে
থাকলে তেমন কোন রোগ হয় না। তবে মাঝে মধ্যে স্পাইডার মাইট এবং মিলি বাগের আক্রমণ
হতে পারে। এদের আক্রমণ হলে, আক্রান্ত পাতা ছেটে ফেলা এবং সেই সাথে উপযুক্ত কিটনাশক
প্রয়োগ করলে এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বংশ বৃদ্ধি : পূর্ণ বয়স্ক
গাছের গোড়ার শক্ত গোল অংশটি অর্ধেক বা চারভাগের-একভাগ শিকড়সহ কেটে নতুন পটে লাগিয়ে
নিয়মিত পরিচর্যা করলে নতুন গাছ উৎপন্ন হয়।
উপকারিতা : ঘরের সৌন্দর্য
বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘরের বাতাস পরিস্কার রাখে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA ঘোষণা করেছে যে বোস্টন ফার্ন সহ আরও বেশ কয়েকটি গাছ (যা ঘরে লাগানো যায়) ঘরের বাতাস পরিশোধন করে। বোস্টন ফার্ন বাতাস থেকে ফর্মালিন (formaldehyde), ও জাইলিন (xylene) মুক্ত করে। তাছাড়া এই গাছটি বিষাক্ত নয়, এজন্য
শিশুরা এবং প্রাণীরা এই গাছ থেকে নিরাপদ।
সারসংক্ষেপ :
=> বোস্টন ফার্ন (Nephrolepis exaltata)
=> মাটি - জৈব সার যুক্ত দো-আঁশ
=> মাটি - জৈব সার যুক্ত দো-আঁশ
=> আলো – ঘরের মধ্যে
স্বাভাবিক যে আলোতে সহজে একটি বই পড়া যায় এমন আলো।
=> পানি – টব বা পটের
মাটি স্যাতস্যাতে রাখার মত পানি দিতে হবে।
=> বৈশিষ্ট্য – সবুজ বাহারী
পাতাযুক্ত সাধারণ ফার্ন। বিশেষ বৈশিষ্ট্য - ঘরের পরিবেশ নির্মল রাখে। সহজে লালন করা যায়।
Comments
Post a Comment