চারদেয়ালের মাঝে পুদিনা (Mentha sp.)
পুদিনা (Mentha sp.)
পুদিনার বিশেষ কিছু ঔষধি
গুণ আছে। এর পাতা কাণ্ড, মূলসহ সমগ্র গাছই ঔষধীগুণে পূর্ণ। হার্টের সুস্থতা, পেটে
গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিণ্য, কফ নিরাময়ে এই পাতা কার্যকর। এছাড়া জ্বর, আমাশয়, অজীর্ণ,
উচ্চরক্তচাপ নিরাময়ে এই পাতা ব্যবহার হয়। পুদিনা পাতার শরবত ত্বক সতেজ রাখে; পাতার
পেষ্ট ব্রণ দূর করে এবং চামড়ার যেকোন সংক্রমণ রোধ করে। দাঁতের মাজন হিসাবও পুদিনা
পাতা ব্যবহার হয়। সর্বপরি পুদিনার শেকড়ের রস, চুলের উঁকুন দূর করার এক মোক্ষম ঔষধ।
নাগরিক জীবনে পুদিনা
পাতার উৎস নিকটস্থ বাজার। তবে বাজারে বর্ষাকালে পুদিনা বেশী পাওয়া গেলেও সারা বছর
সমভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু অতি সহজেই এবং একেবারে কম পরিশ্রমে ঘরের মধ্যেই পুদিন
উৎপাদন করা যায়।
পুদিনা গাছ পর্যাপ্ত
আলোযুক্ত স্থানে ভাল হয়। তবে সরাসরি প্রখর রোদ এই গাছটি তেমন সহ্য করতে পারে না।
তাই ঘরের চারদেয়ালের মধ্যে যেসব গাছ লাগানো যায়, পুদিনা তাদের মধ্যে একটি। পুদিনা গাছ টবের মাটিতে অথবা শুধুমাত্র পানিতে দুইভাবেই উৎপাদন করা যায়।
মাটিতে উৎপাদন : তলায়
ছিদ্র যুক্ত ছোট মাটির টব, তেলের খালি বোতল, ইত্যাদিতে এই গাছ লাগানো যায়। পর্যাপ্ত
জৈব সার যুক্ত দো-আঁশ মাটি (একভাগ গোবর সার / জৈব সার এবং দুই ভাগ দো-আঁশ মাটি)
নির্ধারিত পাত্রে নিয়ে ৬-৭ ইঞ্চি লম্বা পুদিনার ডাল পুঁতে দিয়ে নিয়মিত পানি দিলে
এই ডাল থেকে শিকড় গজায়। মাটিতে এমনভাবে পানি দিতে হয় যেন মাটি আর্দ্র থাকে।
অতিরিক্ত ভিজা মাটিতে পুদিনার ডাল পঁচে যেতে পারে। টবের এক মুঠো মাটি, জোরে মুঠো
করে চাপ দিলে যদি হাত হালকা ভিজা মনে হয় তবে তাতে উপযুক্ত পানি আছে বলে ধরে নেয়া
যায়। টবের / পাত্রের তলার ছিদ্র অতিরিক্ত পানি নিকাশে সহায়তা করে। গাছসহ সম্পূর্ণ
পাত্রটি পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোযুক্ত স্থানে রাখা প্রয়োজন। সরাসরি সূর্যের
আলোতে এই গাছ তেমন ভাল হয় না। ঘরে যে পরিমাণ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক আলোতে একটি বই সহজেই পড়া যায়, সেই পরিমাণ আলো পুদিনা গাছের জন্য যথেষ্ট। পুদিনা গাছ দেখতে বেশ সুন্দর। তাই গাছসহ পাত্রটি ব্যালকনিতে ঝুলন্ত
অবস্থায় রাখলে ব্যালকনির শোভা বৃদ্ধি পায়।
মাটিতে পরিচর্যা : পুদিনা
গাছের শিকড় খুবই দ্রুত বাড়ে। একারণে ২ মাসে একবার মাটি নাড়াচাড়া করে কিছু শিকড়
কেটে দেয়া ও নতুন মাটি দিলে গাছে পাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে ডাল ছাটাই
করে দিলে গাছটি আরও ঘন ঝোপের ন্যায় হবে। ঝুলন্ত গাছের ডাল ঘনঘন না কাটাই ভাল। তাতে
ডাল লম্বা হওয়ার সুযোগ পায়।
পানিতে পুদিনা গাছ উৎপাদন : পুদিনা
কষ্ট সহনশীল গাছ। এর শাখা কেটে সরাসরি পানিতে লাগিয়ে শিকড় গজানো যায়। ঘরে সাজিয়ে
রাখার মত, এরকম একটি বোতলে বা কাঁচের ছোট জারে সাধারণ পরিস্কার পানি নিতে হবে।
নির্ধারিত সুস্থ্য পুদিনা গাছ থেকে ৬ – ৭ ইঞ্চি লম্বা ডাল কেটে নিতে হবে। এবার এই
ডালটির উপরের কয়েকটি পাতা রেখে বাকি পাতা কেটে ফেলতে হবে, নিচের ছবির মত করে। এরপর
সম্পূর্ণ ডালটির অর্ধেক পানিতে ও বাকি অর্ধেক পানির উপরে পাত্রের বাইরে থাকে এমনভাবে লাগাতে
হবে। ৭–১০ দিনের মধ্যে ডালটিতে ছোট ছোট শিকড় গজাবে এবং পরের ১৫ দিনের মধ্যে বেশ
বড় শিকড় পানিতে ছড়িয়ে যাবে। পাত্রে নির্দিষ্ট উচ্চতা বরাবর প্রয়োজনীয় পানি দিতে
হবে। পাত্রের পানি যেন পরিস্কার থাকে। ৫–১০ দিন পরপর অথবা প্রয়োজন বুঝে সম্পূর্ণ পানি পাল্টে নতুন
পানি দিলে গাছে পচন ধরবে না।
উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই
গাছ দ্রুত ঘন হয়ে যায়। তাই ডাল কেটে গাছ পাতলা করে দিতে হয়।
পাতা সংগ্রহ : ফুল আসার
আগেই পাতা সংগ্রহ করতে হয়। এসময় পাতার ঘ্রাণ ভাল থাকে। মাটি থেকে ৩/৪ ইঞ্চি উপরের
সম্পূর্ণ ডাল কেটে পাতা সংগ্রহ করতে হয়। পাতা সংগ্রহের পর অবশিষ্ট ডাল নতুন করে
রোপন করে দিলে নতুন গাছ পাওয়া যায়।
পুদিনা পাতার সুঘ্রাণ ঘরের পরিবেশ সুন্দর রাখে। বাতাস
পরিস্কার রাখে। বাড়ির ড্রইং রূমের সেন্টার টেবিলে ছোট আকারের তাজা পুদিনা গাছ,
ঘরের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। গাছটির সৌন্দর্য, পরিচর্যায় কম পরিশ্রম, সর্বপরি ঔষধিগুণের কথা চিন্তা করে ঘরে এই গাছটি লাগালে মন্দ হয় না। অন্ততঃ রান্না
বা সালাদ তৈরির সময় হাতের কাছে টাটকা পুদিনা পাতা যেমন পাওয়া গেল, তেমনি ঘরের
লাগানো পুদিনার কয়েকটি পাতা দিয়ে তৈরি লেবু বা আমের শরবত, প্রচন্ড গরমের দিনে স্বস্তি
আর অনাবিল আনন্দ দিতে পারে।
Comments
Post a Comment